গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বাসেত জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ ৮৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৫ লাখ টাকার গো খাদ্য, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য, ৮০০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ অর্থ প্রায় ৭ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে। এছাড়া জরুরী ত্রাণের জন্য ৪শ ৪২ মেট্রিকটন চাল মজুত রয়েছে।
এদিকে উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ গুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। ভেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ, জিও রোলসহ অন্যান্য অনুসাঙ্গিক সরঞ্জামাদি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দিন জানান, তার বিভাগের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি পয়েন্টে আড়াই কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ, জিও ফিল্টার, জি পলেস্টার মজুদ করে রেখেছি। যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তৎক্ষণিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, তার বিভাগের আওতাধীন প্রায় সাতক্ষীরায় ৩০৩ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পোল্ডারের ৩টি পয়েন্টে ২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আগাম প্রস্তুতি হিসাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যাক জিও ব্যাগ, ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুদ রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগাত বার্তা পাওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধের উপর নজর রাখা হয়েছে। আমাদের লোকজন তাদেও স্ব স্ব এলাকায় কাজ করছেন। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত রযেছেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। সাতক্ষীরায় ৮৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার ও আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ মোকাবিলার সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
শরণখোলা (বাগেরহাট) : ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আতঙ্কে সিডর বিধ্বস্ত শরণখোলা উপজেলার ভেড়িবাঁধের বাইরে বলেশ্বর নদের তীরে বসবাসকারী পাঁচ শতাধিক পরিবার। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত প্রায় ১০ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিলো উপজেলার সর্বত্র।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব থেকে জানমাল রক্ষা ও করণীয় বিষয়ে জরুরি সভা করে উপজেলা প্রশাসন। সভায় প্রাথমিক সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বনবিভাগ জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পূর্ব সুন্দরবনের দুবলার চর, শ্যালার চর, কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রসহ তুলনামূলক নিচু এলাকার বনভূমি প্লাবিত হয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে স্থানীয় নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে এক থেকে দেড় ফুট।
ভেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসকারী সাউথখালী ইউনিয়নের উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা মোশাররফ হাওলাদার, বিউটি বেগম ও মহসিন হোসেন জানান, ঝড়ের খবরে তারা আতঙ্কে আছেন।
শরণখোলা উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) রায়েন্দা ইউনিয়নের টিম লিডার ওহিদুজ্জামান ডালিম জানিয়েছেন, তাদের সকল ইইনিটের স্বেচ্ছাসেবকরা বলেশ্বর নদের তীরে বসবাসকারী পরিবার ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা বিশেষ টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ফরেস্ট রেঞ্জার) মোঃ খলিলুর রহমান জানান, জোয়ারের পানিতে দুবলার চর, শ্যালার চরসহ বনের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উত্তাল রয়েছে বঙ্গোপসাগর। বনরক্ষীরা সবাই নিরাপদে আছেন।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান বলেন, আমাদের রেঞ্জের আওতায় ১৮টি বন অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই নিরাপদে আছেন। এছাড়া এসব অফিসে বনবিভাগের জলযানগুলো যাতে ঝড়-জলোচ্ছ¡াসে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য অফিসের নিকটবর্তী খালগুলোর নিরাপদ স্থানে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুদীপ্ত কুমার সিংহ বলেন, উপজেলার স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারসহ শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত হয়েছে। এছাড়া শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে।